রবি সিমে পরীক্ষার প্রথম দিনেই গতির চমক দেখালো ফাইভজি নেটওয়ার্ক


 সময় এর সাথে পরিবর্তন হচ্ছে সারা বিশ্ব। আর সেই সাথে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের দেশ। স্মার্টফোনের এই যুগে সকল কিছু হাতের মদ্ধে চলে আসছে। তবে সেই স্মার্টফোনের মোবাইল নেটওয়ার্ক আরও উন্নতে করতে দেশে চালু হতে চলেছে পঞ্চম প্রজ‌ন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক ফাইভজি। আর এই ফাইভজি নেটওয়ার্কে ওঠে প্রতি সেকেন্ডে গতি পায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ গিগাবিটের বেশি।
আজ বুধবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে এই ফাইভজির পরীক্ষা চালানো হয়। এই পরীক্ষায় দেখা যায়  প্রতি সেকেন্ডে গতি পায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ গিগাবিটের বেশি। ফলে ফাইভজি নেটওয়ার্কে ১ গিগাবাইট সাইজের একটি ফাইল ডাউনলোড করতে সময় লাগবে দুই সেকেন্ডের কম।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ফোরজি নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে ১০ থেকে ২২ মেগাবিট (১ গিগাবিট = ১০০০ মেগাবিট) গতিতে একটি ফাইল ডাইনলোড করা যায়, এবং থ্রিজি নেটওয়ার্কে ৩ মেগাবিট গতিতে।
জানা  যায়, বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির সহায়তায় ফাইভজির প্রদর্শনীর পরীক্ষা চালানো হয়। এছাড়া প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এই ফাইভজির এই পরীক্ষা চালানো হয়।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ফাইভজি ইকোসিস্টেম কাজ নিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের রূপান্তরে ফাইভজি’র ব্যবহার করা হবে। পরবর্তী প্রজন্মেও এই তারহীন প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনধারা পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে। চালকবিহীন গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি, বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অব থিংকস, স্মার্ট সিটি এবং নেটওয়ার্ক তৈরিতে ফাইভজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় ফাইভজি চালু নিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আগামীবার ক্ষমতায় এলে ফাইভজি চালু করব। ফাইভজি নিয়ে আমার লক্ষ্য হলো, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইভজি চালু করবে বাংলাদেশ। আমি চাই বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাক। যদি দেশের মানুষ ভোট দিয়ে আমাদের আবারও ক্ষমতায় আনে তবে আমরা বাংলাদেশে ফাইভজি চালু করব।’
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘২০০১ সালে যদি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারত তাহলে আজকে হয়তো বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকোনমিকের দিকে আরও এগিয়ে যেত। আমাদের সামনে এখন সুযোগ এসেছে উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য।’
অনুষ্ঠানে রবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফাইভজির মতো নতুন নতুন প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ফাইভ জি আবারও আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, যাতায়ত, শিপিং এবং অন্যান্য খাত নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের অবশ্যই ফাইভজি’র বিষয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে এবং তবে আমরা টেলিকম খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলোও উপেক্ষা করতে পারি না। তাই এসব সমস্যার সমাধান করেই আমরা সামনে আগাব।
বাস্তব চিত্র হলো, বাংলাদেশে একটি মাত্র মোবাইল অপারেটর কোম্পানি লাভজনক। সুতরাং ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ আনতে এই ইন্ডাস্ট্রির শেয়ারহোল্ডারদের রাজি করানো খুবই কষ্টকর। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটররা (এমএনও), প্রযুক্তি বিক্রেতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকার যদি একসাথে এগিয়ে আসে, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশে ফাইভজি বাস্তবায়নে আমরা একটি সহজ উপায় বের করতে পারব। আজকের ফাইভজির পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী এই সমস্যা সমাধানে প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করেছে।’
হুয়াওয়ের সাউথইস্ট এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট জেমস উ বলেন, ‘আইসিটি খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক প্রবৃদ্ধিতে আমি সবসময়ই উল্লসিত, যা এই অঞ্চলের মানুষের সংযুক্ত করার জন্য একটি সত্যিকারের উদাহরণ হিসেবে থাকবে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে হুয়াওয়ে তাদের সহযোগী হিসেবে পাশে পেয়েছে টেলিকম ক্যারিয়ার অংশীদার, স্থানীয় অংশীদার এবং বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগকে। আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি উন্নতমানের পণ্য ও প্রযুক্তি সমাধান এই দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করবে এবং একটি উন্নত ডিজিটাল জীবনধারা নিশ্চিত করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ফাইভজির সহায়তায় বাংলাদেশের মানুষ তাদের ডিজিটাল জীবনকে আরও বেশি উপভোগ করতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে উপলব্ধি করলাম, সমস্ত মানুষের ভাষা বদলে গেছে। তারা মোবাইল টেকনোলজি, সামনের দিনের টেকনোলজি, সামনের সভ্যতার কথা বলে, সবকিছুর ক্ষেত্রেই একটি মাত্র শব্দ উচ্চারিত হয়, তা হলো ফাইভজি। আমাদের জন্য মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস একটি শিক্ষণীয় বিষয় ছিল।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, সেই সময়ে আমাদের মনে হয়েছে এই প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা যদি পরিচিত হতে না পারি, জাতিগতভাবে আমাদের যদি সম্পৃক্ততা গড়ে না ওঠে, তাহলে আমরা হয়তো আবার পিছিয়ে পড়ব। সেই কারণে এবং আমাদের প্রযুক্তি উপদেষ্টার প্রচণ্ড আগ্রহে, অনুপ্রেরণায় আমরা আজকের দিনটি তৈরি করার জন্য চেষ্টা করেছি।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, হুয়াওয়ের সাউথইস্ট এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট জেমস উ এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ঝ্যাং জেং জুন প্রমুখ।
Powered by Blogger.